আজকাল আমরা অনেক সময় না বুঝেই এমন প্রশ্ন করি, যা মানুষের আত্মবিশ্বাসে, মানসিক স্বস্তিতে বা ব্যক্তিগত জীবনে আঘাত করে। ভদ্র আচরণ মানে শুধু ভালো কথা বলা নয়—কথা বাছাই করার ভদ্রতা। কোন প্রশ্নগুলো মানুষকে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ফেলে, তার কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রথমত, কোনো মেয়েকে হুটহাট জিজ্ঞেস করবেন না, “এখনো বিয়ে করছো না কেন” —এটা শুধু কৌতূহল নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকে পড়া। জীবনে কার সময় কখন আসবে, সেটা তার নিজের সিদ্ধান্ত। এই প্রশ্ন অনেক মেয়েকে চাপের মুখে ফেলে দেয়, তাদের আত্মবিশ্বাসে প্রশ্নচিহ্ন তোলে। পৃথিবীতে যত ক্ষত আছে, সামাজিক চাপের ক্ষতের যন্ত্রণা সবচেয়ে ভয়াবহ।
প্রথমত, কোনো মেয়েকে হুটহাট জিজ্ঞেস করবেন না, “এখনো বিয়ে করছো না কেন” —এটা শুধু কৌতূহল নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকে পড়া। জীবনে কার সময় কখন আসবে, সেটা তার নিজের সিদ্ধান্ত। এই প্রশ্ন অনেক মেয়েকে চাপের মুখে ফেলে দেয়, তাদের আত্মবিশ্বাসে প্রশ্নচিহ্ন তোলে। পৃথিবীতে যত ক্ষত আছে, সামাজিক চাপের ক্ষতের যন্ত্রণা সবচেয়ে ভয়াবহ।

একইভাবে, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা কোনো ছেলেকে বলা—“চাকরি করছো না কেন”—এটাও কষ্টের জায়গায় আঘাত করা। আজকাল চাকরি মানেই দক্ষতা আর ভাগ্যের যুতসই মিলন। যে ছেলেটা চাকরি খুঁজছে, সেও নিজের ঘরে ফিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। তার ব্যর্থতার ক্ষতে গিয়ে কেউ আরেকটা বিষদন্ত বসিয়ে দিলে সেটা ভদ্রতা নয়।
আরেকটা জায়গায় আমরা খুবই ভুল করি—অনুষ্ঠানে গিয়ে খাবারের সমালোচনা করে। এটা অনেকটা কারো আমন্ত্রণ গ্রহণ করে তার সম্মান খোঁচা দেওয়ার মতো। যে মানুষটা তার সাধ্যমতো আয়োজন করেছে, সে চাইছে আপনি তার আনন্দে শরিক হোন। তার রান্নার ভুল ধরা নয়। মনে রাখবেন আপনি টাকা দিয়ে হোটেলে খেতে যাননি, কারো অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হয়ে গিয়েছেন।
কিংবা, সদ্য বিয়ে করা ছেলেকে “কিরে বেশ তো মালদার শ্বশুর পেয়েছিস” বিপরীতভাবে কোনো মেয়েকে "এমন ছেলে পেয়েছ তোমার তো ভাগ্য ভালো" টাইপ লাইন বলা—এটাও একধরনের বিষাক্ত সামাজিক হাস্যরস। বিয়ে প্রতিযোগিতা নয়; সম্পর্কের শুরুতে এমন তুলনা শুধু তাদের ভাবনায় চাপ বাড়ায়। এই বিশ্রী মানসিকতা বর্জন করা উচিত।
কোনো স্টুডেন্টকে এটা বলা উচিত না 'তুমি এই সাবজেক্ট নিয়ে কেন পড়াশুনা করছো?" (যদিনা আপনি তার শিক্ষক হন)—এই লাইনটা শোনামাত্রই একটা ছাত্রের মন ছোট হয়ে যায়। সে হয়তো সব ভেবেচিন্তেই সাবজেক্টটা সিলেক্ট করেছে। তার পরিবারও এতে সম্মতি দিয়েছে। আপনি কেন অযথা এমন কথা বলে তার মনটা খারাপ করে দিচ্ছেন? মনে রাখবেন কারো 'এইম ইন লাইফ' ঠিক করে দেয়াটা আপনার দায়িত্ব না। বাইরের মানুষদের এমন হুটহাট মন্তব্য শুধু বিভ্রান্তি বাড়ায়।
আরেকটা খুব মৌলিক জিনিস—কারো ঘরে গিয়ে সটান তার বেডরুমে ঢুকে পড়া। ঘনিষ্ঠতা মানেই সীমাহীন স্বাধীনতা নয়। প্রত্যেক মানুষের প্রাইভেসির একটা স্পষ্ট রেখা থাকে। সেই লাইন পার করলেই সম্পর্কের স্বস্তি নষ্ট হয়।
একইভাবে, কারো ফোনের গ্যালারিতে স্ক্রল করা—এটাও ভীষণ অভদ্রতা। কেউ মোবাইল গ্যালারিতে কোনো ছবি দেখালে, আপনি শুধু ঐ একটা ছবিই দেখুন। সোয়াইপ করে, স্ক্রল করে গ্যালারির সব ছবি দেখতে চাওয়াটা অভদ্রতা। গ্যালারিতে তার ব্যক্তিগত পারিবারিক ছবি থাকতে পারে, যা হয়তো পাবলিকলি দেখানোর মত না।
সবশেষে, ছোট শিশুকে সেই কুখ্যাত প্রশ্ন—“বাবা না মা, কে তোমাকে বেশি ভালোবাসে?” এটা শুধু ভুল নয়, শিশুর মানসিকতায় অযথা দ্বন্দ্ব ঢুকিয়ে দেওয়া। একটা শিশু যেন বুঝে—ভালোবাসা তুলনাযোগ্য নয়, ভালোবাসা বিভাজ্য নয়।
মনে রাখবেন, ভদ্রতা মানে সুন্দর কথা বলা নয়, কথা বাছাই করা। আচরণই আসল শিক্ষা। এমন কিছু বলি যাতে মানুষ হালকা হয়ে যায়। এমন কিছু না বলি যাতে মানুষ আপনাকে দেখলে রাস্তা বদলে ফেলে।
এখন আপনার প্রতি একটা প্রশ্ন রইল—
আপনার কোন প্রশ্নটা শুনলে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি লাগে?